ইফতারে ও সেহেরিতে কি খাওয়া উচিত এবং কি খাওয়া উচিত না
ইফতারে ও সেহেরিতে কি খাওয়া উচিত এবং কি খাওয়া উচিত না এই গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নটি সকলের একটি সাধারণ প্রশ্ন। এখন পবিত্র রমজান মাস। এই প্রবিত্র মাসে ইফতারে ও সেহেরিতে কি খাওয়া উচিত এবং কি খাওয়া উচিত না সে সম্পর্কে আমাদের সকলের জানা প্রয়োজন।
তাহলে চলুন, কথা না বাড়িয়ে এবং আপনারা অতি মূল্যবান সময় নষ্ট না করে আজকের এই গুরুত্বপূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ার মাধ্যমে জেনে নিন ইফতারে ও সেহেরিতে কি খাওয়া উচিত এবং কি খাওয়া উচিত না সে সম্পর্কে।
ইফতারে কি খাওয়া উচিত
ইফতারে এমন খাবার খাওয়া উচিত যা শরীরকে দ্রুত শক্তি যোগাতে পারে এবং হজমে সহায়ক। এখানে কিছু স্বাস্থ্যকর ইফতারের পরামর্শ দেওয়া হলো:
১. খেজুর: প্রাকৃতিক চিনি, ফাইবার ও পটাশিয়াম সমৃদ্ধ, যা দ্রুত শক্তি দেয় এবং হজমে সহায়তা করে।
২. পানি ও শরবত: পর্যাপ্ত পানি পান করুন যাতে শরীর হাইড্রেটেড থাকে। লেবুর শরবত, ডাবের পানি, বা ইসুবগুলের শরবত খেতে পারেন।
৩. সুপ ও হালকা খাবার: সবজি বা মুরগির স্যুপ খেলে শরীরের পানিশূন্যতা দূর হবে এবং হজমের জন্য ভালো হবে।
৪. প্রোটিন ও কার্বোহাইড্রেট সমৃদ্ধ খাবার: ছোলা, মসুর ডাল, ডিম, দই, বা গ্রিলড মুরগি খেতে পারেন। শসা, টমেটো, গাজরের সালাদ রাখতে পারেন।
৫. পরিমিত ভাজাপোড়া: বেশি তেলযুক্ত খাবার (সিঙ্গারা, সমুচা, পেঁয়াজু) কম পরিমাণে খাওয়া ভালো।
৬. ফল ও বাদাম: তরমুজ, আপেল, পেঁপে, কলা ইত্যাদি ফল রাখা ভালো। কাজু, বাদাম, চীনাবাদাম পরিমিত পরিমাণে খেলে শক্তি পাওয়া যায়।
ইফতার হালকা ও স্বাস্থ্যকর হলে শরীর ভালো থাকবে এবং রাতের নামাজ ও অন্যান্য কাজ সহজ হবে।
ইফতারে কি খাওয়া উচিত না
ইফতারে কিছু খাবার এড়িয়ে চলা উচিত, যাতে শরীর সুস্থ থাকে এবং হজমে সমস্যা না হয়। এখানে কিছু খাবারের তালিকা দেওয়া হলো যা ইফতারে খাওয়া উচিত নয়:
১. অতিরিক্ত ভাজাপোড়া ও তেলযুক্ত খাবার: সমুচা, পেঁয়াজু, বেগুনি, চিপস ইত্যাদি বেশি তেলে ভাজা খাবার খেলে অ্যাসিডিটি, বদহজম ও ওজন বেড়ে যেতে পারে।
২. অতিরিক্ত মিষ্টি ও চিনি যুক্ত খাবার: মিষ্টি শরবত, কোল্ডড্রিংকস, জর্দা, মিষ্টি, হালুয়া ইত্যাদি বেশি পরিমাণে খেলে রক্তে শর্করার মাত্রা দ্রুত বেড়ে যায় এবং পরে দ্রুত কমে গিয়ে দুর্বলতা অনুভূত হতে পারে।
৩. কফি ও ক্যাফেইনযুক্ত পানীয়: চা, কফি বা কোলা জাতীয় পানীয় পান করলে ডিহাইড্রেশন হতে পারে এবং ঘুমের সমস্যা হতে পারে।
৪. অতিরিক্ত মশলাযুক্ত খাবার: ঝাল ও বেশি মশলাযুক্ত খাবার (ঝাল চিকেন, তন্দুরি, স্পাইসি গ্রেভি) খেলে অ্যাসিডিটি ও গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা হতে পারে।
৫. কার্বনেটেড ও কৃত্রিম পানীয়: সফট ড্রিংকস ও বোতলজাত জুসে প্রচুর পরিমাণে চিনি ও কৃত্রিম উপাদান থাকে, যা শরীরের জন্য ক্ষতিকর।
৬. বেশি পরিমাণে খাবার খাওয়া: ইফতারের সময় খুব বেশি খেয়ে ফেললে পরবর্তীতে অস্বস্তি, গ্যাস, ওজন বৃদ্ধি ও অলসতা দেখা দিতে পারে।
ইফতারে সহজপাচ্য, কম তেল-মশলাযুক্ত এবং প্রাকৃতিকভাবে পুষ্টিকর খাবার খাওয়া উচিত, যাতে শরীর সুস্থ থাকে ও সারাদিনের রোজার পর আরামদায়ক অনুভূতি হয়।
সেহরিতে কি খাওয়া উচিত
সেহরিতে এমন খাবার খাওয়া উচিত যা দীর্ঘ সময় শক্তি ধরে রাখতে সাহায্য করে এবং হাইড্রেটেড থাকতে সহায়ক। এখানে কিছু স্বাস্থ্যকর সেহরির পরামর্শ দেওয়া হলো:
১. জটিল কার্বোহাইড্রেট (যা ধীরে হজম হয় এবং দীর্ঘক্ষণ শক্তি দেয়): লাল চালের ভাত, ওটস, আটার রুটি, খেজুর, মিষ্টি আলু। এসব খাবার ধীরে হজম হয় এবং সারাদিন ক্ষুধা কম লাগে।
২. প্রোটিনসমৃদ্ধ খাবার (শক্তি ধরে রাখতে সহায়ক): ডিম, দুধ, দই, মুরগি, মাছ, ডাল, ছোলা। প্রোটিন শরীরকে দীর্ঘক্ষণ শক্তি জোগায় এবং পেশি সুস্থ রাখে।
৩. স্বাস্থ্যকর চর্বি (শক্তি বাড়াতে সাহায্য করে): বাদাম, চিয়া সিড, অলিভ অয়েল, ডার্ক চকোলেট। এগুলো শরীরের জন্য উপকারী এবং দীর্ঘক্ষণ পেট ভরা রাখে।
৪. পানি ও হাইড্রেটিং খাবার: পর্যাপ্ত পানি পান করুন (সেহরির সময় ২-৩ গ্লাস)। ডাবের পানি, দই, শসা, তরমুজ, লেবুর শরবত খেতে পারেন।
৫. ফাইবারযুক্ত খাবার (হজম ভালো রাখে): ফলমূল (আপেল, কলা, পেঁপে, খেজুর), সবজি (শাক, গাজর, ব্রকলি)। এসব খাবার কোষ্ঠকাঠিন্য রোধ করে এবং পানি ধরে রাখে।
সেহরিতে পুষ্টিকর, সহজপাচ্য এবং দীর্ঘক্ষণ শক্তি ধরে রাখে এমন খাবার খাওয়া ভালো, যাতে সারাদিন রোজা রাখার সময় দুর্বলতা ও পানিশূন্যতা কম অনুভূত হয়।
সেহরিতে কি খাওয়া উচিত না
সেহরিতে কিছু খাবার এড়িয়ে চলা উচিত, যা পানিশূন্যতা, হজমের সমস্যা বা সারাদিন দুর্বলতা সৃষ্টি করতে পারে। নিচে সেই খাবারগুলোর তালিকা দেওয়া হলো:
১. অতিরিক্ত লবণযুক্ত খাবার: আচার, চিপস, প্যাকেটজাত স্যুপ, প্রসেসড ফুড। লবণ শরীর থেকে দ্রুত পানি শোষণ করে ফেলে, ফলে সারাদিন তৃষ্ণা বেশি পায়।
২. ভাজাপোড়া ও অতিরিক্ত তেলযুক্ত খাবার: পরোটা, পুরি, ভাজি, চিকেন ফ্রাই, ফাস্ট ফুড। এসব খাবার হজম হতে সময় নেয় এবং গ্যাস্ট্রিক, অম্বল বা বমির সমস্যা হতে পারে।
৩. অতিরিক্ত মিষ্টি ও চিনি যুক্ত খাবার: মিষ্টি, চিনি মিশ্রিত সিরিয়াল, কেক, কনডেন্সড মিল্ক। বেশি মিষ্টি খেলে রক্তে শর্করার মাত্রা দ্রুত বেড়ে যায় এবং পরে দ্রুত কমে গিয়ে দুর্বলতা অনুভূত হতে পারে।
৪. চা, কফি ও ক্যাফেইনযুক্ত পানীয়: চা, কফি, সফট ড্রিংকস
ক্যাফেইন শরীর থেকে পানি বের করে দেয়, ফলে ডিহাইড্রেশন হতে পারে এবং সারাদিন তৃষ্ণা পায়
৫. অতিরিক্ত ঝাল ও মশলাযুক্ত খাবার: ঝাল কারি, পেঁয়াজ-রসুন বেশি দেওয়া তরকারি। এসব খাবার পাকস্থলীর সমস্যা, গ্যাস্ট্রিক ও অ্যাসিডিটি বাড়াতে পারে।
৬. ফাস্ট ফুড ও প্রক্রিয়াজাত খাবার: বার্গার, পিজ্জা, নুডলস, প্যাকেটজাত সস। এতে বেশি চর্বি ও সংরক্ষণকারী উপাদান থাকে, যা শরীরের জন্য ক্ষতিকর।
৭. কার্বনেটেড ও বোতলজাত পানীয়: কোলা, ফ্লেভারড জুস, এনার্জি ড্রিংকস। এগুলো গ্যাস্ট্রিক বাড়ায় এবং শরীরের পানির পরিমাণ কমিয়ে দেয়া।
সেহরিতে হালকা, পুষ্টিকর ও সহজপাচ্য খাবার খাওয়া উচিত, যাতে সারাদিন রোজা রেখে শক্তি থাকে এবং তৃষ্ণা বা দুর্বলতা অনুভূত না হয়।
সেহরির দোয়া আরবি
সেহরির দোয়া আরবিতে:
اللهم إني نويت صوم غدٍ عن أداء فرض رمضان هذا العام، وأتوجه إليك بصدق وأطلب منك التوفيق.
উচ্চারণ: "আল্লাহুম্মা ইন্নি নাওয়াইতু সাওমা গাদিন আন আদায়ি ফর্জি রমাদান হাদা আস-সানাহ, ওয়া আতাওজ্জাহু ইলাইকা বি সিদকি ওয়া আত্তালিবু মিনকা আত-তাওফীকি."
এই দোয়া সেহরি বা রোজা শুরু করার সময় পড়তে হয়।
ইফাতারির দোয়া আরবি
ইফতারের দোয়া আরবি ভাষায়:
اللهم إني لك صمت وبك آمنت وعليك توكلت وعلى رزقك أفطرت
উচ্চারণ:
এই দোয়া ইফতার করার সময় পড়া উচিত।
মন্তব্য। ইফতারে ও সেহেরিতে কি খাওয়া উচিত এবং ইফতারে ও সেহেরিতে কি খাওয়া উচিত না
মন্তব্য। ইফতারে ও সেহেরিতে কি খাওয়া উচিত এবং কি খাওয়া উচিত না
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url