ফিতরা কাদের উপর ওয়াজিব-প্রবাসীদের ফিতরা দেওয়ার নিয়ম
সুপ্রিয় পাঠক, ফিতরা কাদের উপর ওয়াজিব-প্রবাসীদের ফিতরা দেওয়ার নিয়ম নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে আজকের এই পোস্টটিটিতে। বিস্তারিত জানতে এই আর্টিকেলটির সাথেই থাকুন।
তাহলে চলুন, আজকের এই আর্টিকেলটি প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত মনোযোগ সহকারে ও ধৈর্য ধরে পড়ার মাধ্যমে জেনে নিন ফিতরা কাদের উপর ওয়াজিব-প্রবাসীদের ফিতরা দেওয়ার নিয়ম সম্পর্কে আলোচনা।
ফিতরা
ফিতরা বা সদকাতুল ফিতর হল এক ধরনের বাধ্যতামূলক দান, যা রমজান মাস শেষ হওয়ার পর ঈদুল ফিতরের নামাজের আগে গরিবদের দেওয়া হয়। এটি ইসলামে একটি গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত এবং সামর্থ্যবান মুসলমানদের জন্য ওয়াজিব (অবশ্যক)।
ফিতরা কাদের উপর ওয়াজিব
ফিতরা (সদকাতুল ফিতর) রমজানের শেষে ঈদুল ফিতরের আগে দেওয়া একটি বাধ্যতামূলক দান, যা নির্দিষ্ট কিছু ব্যক্তির ওপর ওয়াজিব (অবশ্যক)।
ফিতরা ওয়াজিব হয় যাদের ওপর:
১। মুসলিম হওয়া: ফিতরা দেওয়া কেবল মুসলমানদের জন্য ফরজ।
২। নিসাব পরিমাণ সম্পদের মালিক হওয়া: যাদের কাছে নিসাব পরিমাণ সম্পদ আছে, তাদের ওপর ফিতরা ওয়াজিব। নিসাব পরিমাণ মানে—যে ব্যক্তি যাকাতের ন্যূনতম সম্পদসীমা (সোনা ৭.৫ ভরি বা রূপা ৫২.৫ ভরি বা এর সমমূল্যের অর্থ/সম্পদ) অর্জন করেছেন, তবে সেই সম্পদের ওপর এক বছর পূর্ণ হওয়া শর্ত নয়।
৩। নিজ ও পরিবারের অতিরিক্ত সম্পদ থাকা: যাদের মৌলিক প্রয়োজনের অতিরিক্ত প্রয়োজনীয় সম্পদ রয়েছে, তারা ফিতরা দিতে বাধ্য।
৪। প্রাপ্তবয়স্ক ও স্বাধীন হওয়া: প্রাপ্তবয়স্ক ও স্বাধীন ব্যক্তির ওপর ফিতরা ওয়াজিব হয়। তবে পিতা-মাতা তাদের ছোট সন্তানদের ফিতরা আদায় করবে।
ফিতরা আদায়ের সময়: ঈদুল ফিতরের নামাজের আগেই ফিতরা আদায় করা উত্তম। রমজান মাসের শেষ দিকে বা ঈদের আগেই দেওয়া ভালো।
প্রবাসীদের ফিতরা দেওয়ার নিয়ম
প্রবাসে বসবাসকারী মুসলমানদের জন্যও সদকাতুল ফিতর (ফিতরা) ওয়াজিব, যদি তারা নিসাব পরিমাণ সম্পদের মালিক হয়। তবে তারা কোথায় এবং কীভাবে ফিতরা দেবেন, তা নিয়ে অনেকের প্রশ্ন থাকে।
১. প্রবাসীরা কোথায় ফিতরা দিতে পারবেন: প্রবাসীরা চাইলে দুই জায়গায় ফিতরা দিতে পারেন: যথা-
- নিজ দেশে: যেখানে তারা বসবাস করছেন, সেখানকার গরিবদের দিতে পারেন।
- নিজ জন্মভূমিতে: নিজের দেশ বা গ্রামে-শহরে থাকা গরিব আত্মীয় বা দরিদ্র মানুষদের ফিতরা পাঠিয়ে দিতে পারেন।
উভয় পদ্ধতিই বৈধ, তবে সবচেয়ে উত্তম হলো যেখানে গরিবদের বেশি প্রয়োজন, সেখানে দেওয়া।
২. ফিতরা দেওয়ার সময়: ঈদের নামাজের আগেই ফিতরা দেওয়া উত্তম। রমজানের শেষ দিকে বা শুরুর দিকেও দেওয়া যায়। যদি দেশের কোনো ট্রাস্ট বা আত্মীয়ের মাধ্যমে পাঠানো হয়, তবে আগে পাঠিয়ে দেওয়া ভালো, যেন ঈদের আগেই গরিবরা তা পায়।
৩. ফিতরার পরিমাণ: যেহেতু ফিতরা সাধারণত স্থানীয় বাজারদরের ভিত্তিতে নির্ধারিত হয়, তাই প্রবাসীরা যেখান থেকে ফিতরা দেবেন, সেখানকার খাদ্যদ্রব্যের দামে হিসাব করবেন।
- গম – ১.৯ কেজি বা এর সমমূল্যের অর্থ।
- যব – ৩.৮ কেজি বা এর সমমূল্যের অর্থ।
- খেজুর – ৩.৮ কেজি বা এর সমমূল্যের অর্থ।
যদি নিজ দেশে টাকা পাঠাতে চান, তবে সেখানে ফিতরার পরিমাণ অনুযায়ী স্থানীয় বাজারদর অনুযায়ী হিসাব করে পাঠানো ভালো।
৫. ফিতরা কীভাবে দেওয়া যাবে: নিজে সরাসরি দিতে পারেন।
বিশ্বস্ত আত্মীয় বা বন্ধুদের মাধ্যমে দেশে পাঠিয়ে দিতে পারেন।
ইসলামিক সংস্থা, মসজিদ বা চ্যারিটি সংগঠনের মাধ্যমে গরিবদের দিতে পারেন।
উত্তম পদ্ধতি: যদি প্রবাসে এমন দরিদ্র লোক না থাকে যারা ফিতরা পাওয়ার উপযুক্ত, তবে নিজের দেশে গরিব আত্মীয় বা স্থানীয় দরিদ্রদের পাঠিয়ে দেওয়া উত্তম।
অনলাইনের মাধ্যমে ইসলামিক সংস্থাগুলোর মাধ্যমে সহজেই দেশে বা বিদেশে ফিতরা পৌঁছে দেওয়া যায়।
ফিতরা সম্পর্কে রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন: "সদকাতুল ফিতর রোজাদারের জন্য পাপ থেকে পরিশুদ্ধির মাধ্যম এবং গরিব-মিসকিনদের খাবারের ব্যবস্থা।" (আবু দাউদ: ১৬০৯)
ফিতরা কাকে দেওয়া যাবে
ফিতরা দেওয়ার ক্ষেত্রে ইসলামিক বিধান অনুযায়ী যেসব ব্যক্তিকে দেওয়া যাবে, তাদের সাধারণত যাকাত গ্রহণের যোগ্য হতে হয়। তবে কিছু নির্দিষ্ট শ্রেণির মানুষকে অগ্রাধিকার দেওয়া হয়।
ফিতরা কাদের দেওয়া যাবে:
- গরিব ও মিসকিন (অত্যন্ত দরিদ্র) – যারা মৌলিক চাহিদা পূরণে অক্ষম।
- ফকির (নিঃস্ব ব্যক্তি) – যাদের কাছে নিসাব পরিমাণ সম্পদ নেই এবং জীবিকা নির্বাহ করা কষ্টকর।
- ঋণগ্রস্ত ব্যক্তি – যারা বৈধ কারণে ঋণের বোঝায় পড়েছে এবং তা পরিশোধের সামর্থ্য নেই।
- মুসাফির (যাত্রাকারী, যারা আর্থিক সংকটে আছে) – যারা ভ্রমণে গিয়ে আর্থিক কষ্টে পড়েছে এবং গন্তব্যে পৌঁছার জন্য সহায়তা প্রয়োজন।
- নবমুসলিম বা ধর্মান্তরিত ব্যক্তি – যারা ইসলাম গ্রহণ করেছেন এবং আর্থিক সংকটে আছেন।
- আল্লাহর পথে সংগ্রামরত ব্যক্তি (ফি সাবিলিল্লাহ) – যারা দ্বীনের প্রচার ও কল্যাণমূলক কাজে নিয়োজিত এবং সহায়তার প্রয়োজন।
ফিতরা দেওয়ার সর্বোত্তম পদ্ধতি: নিকটাত্মীয়দের মধ্যে যারা দরিদ্র, তাদের আগে সহায়তা করা উত্তম। প্রতিবেশী ও পরিচিত গরিবদের খোঁজ নিয়ে ফিতরা দেওয়া ভালো। বিভিন্ন ইসলামিক সংস্থা বা মসজিদের মাধ্যমে গরিবদের মধ্যে বিতরণ করাও একটি ভালো উপায়।
ফিতরা দেওয়ার নিয়ম
১. ফিতরা দেওয়ার সময়: ঈদুল ফিতরের নামাজের আগেই ফিতরা দেওয়া উত্তম। তবে কেউ চাইলে রমজানের শেষের দিকে বা রমজান মাসের শুরুতেও ফিতরা দিতে পারে। ঈদের নামাজের পর ফিতরা দেওয়া হলে এটি সাধারণ সদকা হিসেবে গণ্য হবে, তবে আদায় হয়ে যাবে।
২. ফিতরা দেওয়ার যোগ্যতা: যে ব্যক্তি নিসাব পরিমাণ সম্পদের মালিক (অতিরিক্ত প্রয়োজনের বাইরে ন্যূনতম সম্পদ বা অর্থ আছে), তার জন্য ফিতরা দেওয়া ওয়াজিব।
৩. ফিতরার নির্ধারিত পরিমাণ: ফিতরা সাধারণত নির্দিষ্ট খাবারের পরিমাণ অনুযায়ী নির্ধারিত হয়। হাদিস অনুযায়ী:
গম, যব ও খেজুর এর বাজারমূল্য অনুযায়ী নিধারিত পরিমাণ।
আজকাল অনেক জায়গায় এর টাকার মূল্যে হিসাব করে দেওয়া হয়, যা স্থানীয় বাজারদরের ওপর নির্ভর করে।
৪. ফিতরা দেওয়ার সর্বোত্তম পদ্ধতি: পরিবারের গরিব আত্মীয়দের আগে দেওয়া উত্তম। নিজের এলাকার গরিব-মিসকিনদের খোঁজ নিয়ে দেওয়া ভালো। ইসলামিক সংস্থা বা মসজিদের মাধ্যমে ফিতরা বিতরণ করা যেতে পারে
ফিতরা নিয়ে হাদিস: রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, "সদকাতুল ফিতর রোজাদারের জন্য পাপ থেকে পরিশুদ্ধির মাধ্যম এবং গরিব-মিসকিনদের খাবারের ব্যবস্থা।" (আবু দাউদ: ১৬০৯)
মন্তব্য। ফিতরা কাদের উপর ওয়াজিব-প্রবাসীদের ফিতরা দেওয়ার নিয়ম
পাঠক, আশা করি উপরের সবগুলো প্রতিবেদন মনোযোগ দিয়ে পড়েছেন এবং পড়ার মাধ্যমে বিস্তারিত আলোচনাসহ জানতে পেরেছেন ফিতরা কাদের উপর ওয়াজিব-প্রবাসীদের ফিতরা দেওয়ার নিয়ম।
আমাদের সকলের ফিতরা সম্পর্কে সঠিক ধারণা ও জ্ঞান থাকা উচিৎ। নতুন নতুন আর্টিকেল পেতে এই ওয়েবসাইটটিতে ফলো দিয়ে রাখুন।
এতক্ষন আপনার মূল্যবান সময় দিয়ে ফিতরা কাদের উপর ওয়াজিব-প্রবাসীদের ফিতরা দেওয়ার নিয়ম সম্পর্কিত আর্টিকেলটির সাথে থাকার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ।
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url