ইফতারের আগে দোয়া কবুল হাদিস,ইফতারের ফজিলত সম্পর্কে হাদিস

ইফতারের আগে দোয়া কবুল হাদিস, ইফতারের ফজিলত সম্পর্কে হাদিস নিয়ে আলোচনা করতে চলেছি আজকের এই পোস্টটিতে। আপনি যদি ইফতার সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য জানতে চান তবে এই পোস্টটি সম্পূর্ণ পড়ুন।







তাহলে চলুন কথা না বাড়িয়ে এবং আপনারা মূল্যবান সময় নষ্ট না করে আজকের এই পোস্টটি প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত পড়ার মাধ্যমে জেনে নিন ইফতারের আগে দোয়া কবুল হাদিস,ইফতারের ফজিলত সম্পর্কে হাদিস

ইফতারের আগে দোয়া কবুল হাদিস

ইফতারের আগে দোয়া কবুল হওয়ার বিষয়ে হাদিসে উল্লেখ আছে যে, রোজাদারের দোয়া ইফতারের সময় গ্রহণযোগ্য হয়।

হাদিস: ১. রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন— "তিন ব্যক্তির দোয়া ফিরিয়ে দেওয়া হয় না: ন্যায়পরায়ণ শাসকের, রোজাদারের যখন সে ইফতার করে এবং মজলুমের (অত্যাচারিত ব্যক্তির) দোয়া।" (সুনান ইবনে মাজাহ, হাদিস: ১৭৫২; তিরমিজি, হাদিস: ২৫২৬)

ইফতারের সময় দোয়া: رَبِّي إِنِّي لَكَ صُمْتُ وَبِكَ آمَنتُ وَعَلَيْكَ تَوَكَّلْتُ وَعَلَىٰ رِزْقِكَ أَفْطَرْتُ

উচ্চারণ: "রাব্বি ইন্নি লাকা সুম্তু, ওয়া বিকা আমান্তু, ওয়া আলাইকা তাওয়াক্কালতু, ওয়া আলা রিজকিকা আফতারতু।"

অর্থ: হে আমার প্রতিপালক! আমি তোমার জন্য রোজা রেখেছি, তোমার প্রতি ঈমান এনেছি, তোমার ওপর ভরসা করেছি এবং তোমার দেওয়া রিজিক দ্বারাই ইফতার করলাম।

এই সময়ে দোয়া কবুল হওয়ার ব্যাপারে অনেক হাদিস পাওয়া যায়, তাই ইফতারের আগে ও ইফতারের সময় বেশি বেশি দোয়া করা উত্তম।

ইফতারের ফজিলত সম্পর্কে হাদিস

ইফতার করা এবং করানো— দুটোরই অনেক ফজিলত আছে, যা বিভিন্ন হাদিসে উল্লেখ রয়েছে। নিচে কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ হাদিস তুলে ধরা হলো:

১. রোজাদারের জন্য দুটি আনন্দের মুহূর্ত: রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন— "রোজাদারের জন্য দুটি আনন্দের মুহূর্ত আছে:

(১) যখন সে ইফতার করে, তখন সে আনন্দিত হয়।
(২) যখন সে তার রবের সাথে সাক্ষাৎ করবে, তখন সে তার রোজার ফল পেয়ে আনন্দিত হবে।" (বুখারি, হাদিস: ১৯০৪; মুসলিম, হাদিস: ১১৫১)

২. বিলম্ব না করে দ্রুত ইফতার করা: রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন— "মানুষ যতক্ষণ তাড়াতাড়ি ইফতার করে, তারা কল্যাণের মধ্যে থাকবে।" (বুখারি, হাদিস: ১৯৫৭; মুসলিম, হাদিস: ১০৯৮)

অন্য হাদিসে এসেছে— "আমাদের ধর্ম (ইসলাম) তখনই থাকবে, যতক্ষণ আমরা দ্রুত ইফতার করবো। কেননা, ইহুদিরা দেরি করে ইফতার করে।" (আবু দাউদ, হাদিস: ২৩৫৩)

৩. ইফতার করানোর ফজিলত: রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন— "যে ব্যক্তি কোনো রোজাদারকে ইফতার করায়, সে রোজাদারের সমান সওয়াব পাবে, অথচ রোজাদারের সওয়াব কমানো হবে না। (তিরমিজি, হাদিস: ৮০৭; ইবনে মাজাহ, হাদিস: ১৭৪৬)

৪. খেজুর বা পানি দিয়ে ইফতার করা::"রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাজা খেজুর দিয়ে ইফতার করতেন, যদি তা না পেতেন তবে শুকনো খেজুর দিয়ে করতেন, আর যদি সেটাও না থাকতো, তাহলে কিছু পানি পান করতেন।" (আবু দাউদ, হাদিস: ২৩৫৬)

ইফতার একটি গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত এবং এটি দ্রুত করা সুন্নত। ইফতারের সময় দোয়া কবুল হয় এবং যারা অন্যকে ইফতার করায়, তারা বিশাল সওয়াব লাভ করে।

তাই ইফতারের সময় দেরি না করে, খেজুর বা পানি দিয়ে ইফতার করা এবং বেশি বেশি দোয়া করা উচিত।

ইফতার করা কি ফরজ

ইফতার করা ফরজ নয়, তবে সুন্নত ও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত। ইসলামে রোজা রাখা ফরজ, আর রোজার সময় সূর্যাস্তের পর ইফতার করা সুন্নত।

রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) দ্রুত ইফতার করতেন এবং উম্মতকে তা করতে উৎসাহিত করেছেন।

ইফতার দ্রুত করা সুন্নত: রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন— "মানুষ যতক্ষণ তাড়াতাড়ি ইফতার করে, তারা কল্যাণের মধ্যে থাকবে।" (বুখারি, হাদিস: ১৯৫৭; মুসলিম, হাদিস: ১০৯৮)

অন্য হাদিসে এসেছে— "আমাদের ধর্ম (ইসলাম) তখনই ঠিক থাকবে, যতক্ষণ আমরা দ্রুত ইফতার করবো। কেননা, ইহুদিরা দেরি করে ইফতার করে।" (আবু দাউদ, হাদিস: ২৩৫৩)

ইফতার না করলে কি সমস্যা: ইফতার না করা হারাম নয়, তবে রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ইফতার করতে নির্দেশ দিয়েছেন এবং দেরি করতে নিষেধ করেছেন। তাই ইচ্ছাকৃতভাবে ইফতার না করা সুন্নতের বিরোধিতা করা হয়, যা অনুচিত ও গুনাহের কাজ হতে পারে।

পরিশেষে:
  • ইফতার করা ফরজ নয়, তবে সুন্নত।
  • দ্রুত ইফতার করা ইসলামের একটি গুরুত্বপূর্ণ বিধান।
  • দেরি না করে খেজুর বা পানি দিয়ে ইফতার করা উত্তম।
  • ইচ্ছাকৃতভাবে ইফতার না করা সুন্নতের বিরুদ্ধে কাজ করা হবে।

ইফতার বিতরণ নিয়ে কিছু কথা

ইফতার বিতরণ: ফজিলত ও গুরুত্ব:

রমজান মাসে রোজাদারদের ইফতার করানো অত্যন্ত ফজিলতপূর্ণ একটি কাজ। এটি শুধু দান-সদকা নয়, বরং দ্বীনি ভ্রাতৃত্ববোধ বৃদ্ধির অন্যতম উপায়। ইফতার বিতরণ সম্পর্কে হাদিসে বড় পুরস্কারের কথা উল্লেখ আছে।

১. ইফতার করানোর ফজিলত: রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন—

"যে ব্যক্তি কোনো রোজাদারকে ইফতার করায়, সে রোজাদারের সমান সওয়াব পাবে, অথচ রোজাদারের সওয়াবে কোনো কমতি হবে না।" (তিরমিজি, হাদিস: ৮০৭; ইবনে মাজাহ, হাদিস: ১৭৪৬)

অর্থাৎ, যদি আপনি একজন রোজাদারকে ইফতার করান, তাহলে আপনি নিজের রোজার সওয়াবের পাশাপাশি আরও একটি রোজার সওয়াব পেয়ে যাবেন!

২. ইফতার বিতরণে দানের সওয়াব: রমজানে দান-সদকার গুরুত্ব অনেক বেশি। রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) নিজেও রমজানে বেশি দান করতেন।

তিনি বলেছেন— "যে ব্যক্তি কোনো মুমিনকে রমজানে ইফতার করাবে, আল্লাহ তাকে কিয়ামতের দিন আমার হাউজে (হাউজে কাউসর) থেকে পানি পান করাবেন, সে জান্নাতে প্রবেশের আগ পর্যন্ত তৃষ্ণার্ত হবে না।" (সহিহ ইবনে খুজাইমা, হাদিস: ১৮৮৭)

৩. কাকে ইফতার করানো উচিত: ইফতার বিতরণের ক্ষেত্রে নিম্নলিখিত বিষয়গুলো লক্ষ্য করা উচিত:
  • গরিব ও অসহায়দের অগ্রাধিকার দেওয়া – যারা নিজেরা ভালোভাবে ইফতার করতে পারে না।
  • মসজিদ, রাস্তা বা হাসপাতালের সামনে বিতরণ করা – যেখানে পথচারী বা কর্মজীবী রোজাদার থাকতে পারেন।
  • আত্মীয়-স্বজন ও প্রতিবেশীদের স্মরণ করা – এটি সম্পর্ক মজবুত করে এবং দ্বীনি ভ্রাতৃত্ব গড়ে তোলে।
৪. কী ধরনের ইফতার বিতরণ করা ভালো:
  • খেজুর ও পানি (সুন্নতি ইফতার)
  • ফলমূল ও হালকা খাবার
  • খাবার প্যাকেট (যেমন বিরিয়ানি, খিচুড়ি ইত্যাদি)
  • জুস বা শরবত
সাধারণত, রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) খেজুর ও পানি দিয়ে ইফতার করতেন। তাই ইফতার বিতরণে এই সুন্নত অনুসরণ করাই উত্তম।

ইফতার বিতরণ একটি বড় সওয়াবের কাজ এবং এটি রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সুন্নত। গরিব-অসহায়দের অগ্রাধিকার দিয়ে ইফতার করানো উত্তম। ইফতার করালে রোজাদারের সমান সওয়াব পাওয়া যায়। যতটুকু সম্ভব, আন্তরিকতা ও ভালোবাসার সঙ্গে ইফতার বিতরণ করা উচিত।

রমজানে আমাদের সবাইকে সাধ্যের মধ্যে ইফতার বিতরণের কাজে অংশ নেওয়া উচিত, যাতে আমরা আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন করতে পারি।

ইফতার করানোর ফজিলত আল কাউসার

রমজানে রোজাদারকে ইফতার করানো অত্যন্ত সওয়াবের কাজ, এবং এর মাধ্যমে জান্নাতে বিশেষ পুরস্কার লাভের প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে অন্যতম হলো হাউজে কাউসার থেকে পান করার সৌভাগ্য।

হাদিসে এসেছে: রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন— "যে ব্যক্তি কোনো মুমিনকে রমজানে ইফতার করাবে, আল্লাহ তাকে কিয়ামতের দিন আমার হাউজ (হাউজে কাউসার) থেকে এমন পানীয় পান করাবেন, যার ফলে সে জান্নাতে প্রবেশের আগ পর্যন্ত তৃষ্ণার্ত হবে না।"  [সহিহ ইবনে খুজাইমা, হাদিস: ১৮৮৭]

হাউজে কাউসার কী: হাউজে কাউসার হলো জান্নাতে অবস্থিত একটি বিশাল হ্রদ বা ঝর্ণাধারা, যা মহান আল্লাহ রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে দান করেছেন। এটি সম্পর্কে কুরআনে বলা হয়েছে: "নিশ্চয়ই আমি তোমাকে কাউসার দান করেছি।" (সূরা আল-কাওসার: ১)

ইফতার করানোর মাধ্যমে কী লাভ:
  • রোজাদারের সমান সওয়াব পাওয়া যায় (তিরমিজি, হাদিস: ৮০৭)
  •  হাউজে কাউসার থেকে পান করার সুযোগ
  • রমজানের দানের ফজিলত লাভ
  • জান্নাতে প্রবেশের বিশেষ পুরস্কার
রমজানে ইফতার করানো শুধু দান-সদকা নয়, বরং এটি জান্নাতের পথে একটি বড় মাধ্যম। তাই আমাদের সাধ্য অনুযায়ী বেশি বেশি ইফতার করানোর চেষ্টা করা উচিত, যাতে আল্লাহ আমাদের হাউজে কাউসার থেকে পান করার সৌভাগ্য দান করেন।

মন্তব্য। ইফতারের আগে দোয়া কবুল হাদিস,ইফতারের ফজিলত সম্পর্কে হাদিস 

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url