গর্ভাবস্থায় ঠোঁট কালো হয় কেন ও গর্ভাবস্থায় কালো স্রাব কেন হয়

গর্ভাবস্থায় ঠোঁট কালো হয় কেন ও গর্ভাবস্থায় কালো স্রাব কেন হয় এই গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে আজকের এই পোস্টটিতে। অনেক গর্ভবতী মহিলারা এই সমস্যার সম্মুখীন হয়ে থাকেন। তাদের জন্য আজকের এই পোস্টটি।
তাহলে চলুন কথা না বাড়িয়ে আজকের আলোচ্য বিষয় গর্ভাবস্থায় ঠোঁট কালো হয় কেন ও গর্ভাবস্থায় কালো স্রাব কেন হয় এই সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নিন।

গর্ভাবস্থায় ঠোঁট কালো হয় কেন


1. হরমোনের পরিবর্তন: গর্ভাবস্থায় শরীরে ইস্ট্রোজেন ও প্রোজেস্টেরনের মতো হরমোনের মাত্রা বেড়ে যায়, যা মেলানিন (চর্মের রঙ নির্ধারণকারী রঞ্জক পদার্থ) উৎপাদন বাড়িয়ে দিতে পারে। এতে ঠোঁটসহ শরীরের বিভিন্ন অংশে রঙ গা dark হতে পারে।

2. পিগমেন্টেশন বৃদ্ধি (Hyperpigmentation): অনেক গর্ভবতী নারীর মুখে, ঠোঁটে বা গালে কালচে দাগ দেখা যায়, যাকে "Melasma" বা "Mask of Pregnancy" বলা হয়।

3. ডিহাইড্রেশন ও পুষ্টির ঘাটতি: শরীরে পর্যাপ্ত পানি না থাকলে, বা ভিটামিন B12 ও আয়রনের ঘাটতি থাকলে ঠোঁট শুষ্ক ও কালো হয়ে যেতে পারে।

4. সান এক্সপোজার (সূর্যের রশ্মি): অতিরিক্ত রোদে থাকলে ঠোঁটে কালচে দাগ পড়তে পারে, বিশেষ করে গর্ভাবস্থায় ত্বক বেশি সংবেদনশীল থাকে।

5. ঔষধ বা প্রসাধনীর প্রতিক্রিয়া: কোনো বিশেষ প্রসাধনী, লিপস্টিক বা ঔষধে অ্যালার্জি থাকলেও ঠোঁটের রঙ পরিবর্তন হতে পারে।

গর্ভাবস্থায় পায়খানা সবুজ হয় কেন

1. খাদ্যাভ্যাসের পরিবর্তন: আপনি যদি বেশি পরিমাণে সবুজ শাকসবজি (যেমন পালং শাক, কলা শাক) খান, তাহলে তার রঙ পায়খানায় দেখা যেতে পারে।

2. প্রেনেটাল ভিটামিন বা আয়রন সাপ্লিমেন্ট: গর্ভাবস্থায় আয়রন বা অন্যান্য ভিটামিন গ্রহণের ফলে হজমে পরিবর্তন হয় এবং পায়খানার রঙ সবুজ বা গা dark ় হতে পারে।

3. বদহজম বা দ্রুত হজম (Fast Transit): হরমোনজনিত কারণে কখনো কখনো খাবার দ্রুত অন্ত্রে চলে যায়, ফলে পিত্ত (bile) ঠিকমতো ভেঙে যেতে পারে না, এতে পায়খানা সবুজ দেখায়। পিত্ত হল সবুজাভ রঙের একপ্রকার পাচক রস।

4. অ্যান্টিবায়োটিক সেবন: কোনো সংক্রমণের জন্য অ্যান্টিবায়োটিক খেলে অন্ত্রের ব্যাকটেরিয়ার ভারসাম্য নষ্ট হতে পারে, যার ফলে সবুজ পায়খানা হতে পারে।

5. সংক্রমণ বা ডায়রিয়া: যদি পায়খানার সঙ্গে পেট ব্যথা, গ্যাস, বা ডায়রিয়া হয়, তাহলে এটা সংক্রমণের লক্ষণও হতে পারে (যেমন: সালমোনেলা বা ই. কোলাই সংক্রমণ)।

গর্ভাবস্থায় গায়ের রং কালো হয় কেন

গর্ভাবস্থায় অনেক মায়েরই গায়ের রঙ আগের চেয়ে কিছুটা গা dark ় বা কালচে হয়ে যেতে পারে, এবং এটা একেবারেই স্বাভাবিক ও অস্থায়ী একটি বিষয়।

গর্ভাবস্থায় গায়ের রঙ কালচে হওয়ার কারণ

1. হরমোনের পরিবর্তন: গর্ভাবস্থায় ইস্ট্রোজেন, প্রোজেস্টেরন এবং মেলানোসাইট-স্টিমুলেটিং হরমোন (MSH) এর পরিমাণ বেড়ে যায়। এগুলো ত্বকে মেলানিন উৎপাদন বাড়িয়ে দেয়, যা ত্বকের রঙকে গা dark ় করে।

2. হাইপারপিগমেন্টেশন (Hyperpigmentation): ত্বকের নির্দিষ্ট অংশ যেমন গাল, কপাল, গলা, বগল, নাভির আশপাশ, স্তনের চারপাশ, ঠোঁট ইত্যাদি কিছুটা গা dark ় হয়ে যায়। এটি অনেক সময় Melasma নামেও পরিচিত।

3. সূর্যের আলো: গর্ভাবস্থায় ত্বক সূর্যের প্রতি বেশি সংবেদনশীল হয়। সূর্যের UV রশ্মি মেলানিন আরও বেশি উৎপাদন করতে পারে, ফলে ত্বক আরও কালচে হয়ে যায়।

4. জেনেটিক কারণ: পরিবারের অন্য কেউ যদি গর্ভাবস্থায় এমন অভিজ্ঞতা পেয়ে থাকেন, তবে আপনারও একই সমস্যা হওয়া স্বাভাবিক।

গর্ভাবস্থায় নাভি কালো হয় কেন

গর্ভাবস্থায় নাভি বা পেটের মাঝ বরাবর অংশটা (নাভি থেকে নিচের দিকে) কালো হয়ে যাওয়া একটি সাধারণ এবং প্রাকৃতিক প্রক্রিয়া। এটি সাধারণত "Linea Nigra" নামে পরিচিত।

কেন হয়?

1. হরমোনজনিত পরিবর্তন: গর্ভাবস্থায় ইস্ট্রোজেন ও প্রোজেস্টেরনের মাত্রা বেড়ে যায়, যা শরীরে মেলানিন নামক রঞ্জকের উৎপাদন বাড়িয়ে দেয়। এর ফলে ত্বকে গা dark ় রেখা বা দাগ দেখা যায়।

2. ত্বকের টান (Stretching): পেট বড় হওয়ার কারণে ত্বকে টান পড়ে, এবং এতে ত্বকের নিচের অংশে রক্তসঞ্চালন ও রঞ্জকের ঘনত্ব কিছুটা বেড়ে যায়, যা কালচে হয়ে দেখা যায়।

3. পূর্ববর্তী লুকানো রেখা: আমাদের অনেকেরই পেটের মাঝ বরাবর পাতলা একটি রেখা থাকে, যা গর্ভাবস্থায় গা dark ় হয়ে স্পষ্ট হয়ে ওঠে। আগে চোখে না পড়লেও এখন তা কালো রঙের কারণে দেখা যায়।

চিন্তার কিছু আছে?

না, এটি সম্পূর্ণ স্বাভাবিক। শিশুর জন্মের পর ধীরে ধীরে এই কালচে দাগ মিলিয়ে যায়। কারো ক্ষেত্রে এটা কয়েক মাস লাগে, আবার কারো একটু বেশি সময়।

করণীয়:

  • পর্যাপ্ত পানি পান করুন
  • সূর্যের আলোতে গেলে পেট ঢেকে রাখুন
  • ত্বকের যত্নে প্রাকৃতিক ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করুন
  • গর্ভকালীন কোনো প্রসাধনী ব্যবহারের আগে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন

গর্ভাবস্থায় কালো স্রাব কেন হয়

গর্ভাবস্থায় কালো বা গাড় dark  রঙের স্রাব (discharge) হলে অনেকেই ভয় পান, কিন্তু এর মানে সবসময় খারাপ কিছু নয়। তবে এটি কেন হচ্ছে, সেটি নির্ভর করে স্রাবের প্রকৃতি ও সঙ্গে থাকা অন্যান্য উপসর্গের ওপর।

গর্ভাবস্থায় কালচে স্রাব হওয়ার সাধারণ কারণগুলো:

1. পুরনো রক্ত (Old Blood): কখনও কখনও জরায়ুর ভিতরে সামান্য রক্তপাত হলে, সেটা শরীর থেকে বের হতে কিছুটা সময় নেয়। এই রক্ত শুকিয়ে গিয়ে গা dark ় বা কালচে বাদামি রঙের স্রাব হিসেবে বের হতে পারে।

সাধারণত গর্ভাবস্থার শুরুতে এটি ঘটে, যাকে বলা হয় implantation bleeding (ভ্রূণ জরায়ুতে বসার সময় হালকা রক্তপাত)।

2. হালকা স্পটিং (Spotting): প্রথম ত্রৈমাসিকে হরমোনের ওঠানামা বা জরায়ুর গঠনগত পরিবর্তনের কারণে হালকা রঙের স্রাব বা রক্তপাত হতে পারে।

অনেক সময় সহবাস, আভ্যন্তরীণ আল্ট্রাসাউন্ড বা ভারী পরিশ্রমের পরেও সামান্য স্পটিং দেখা দিতে পারে।

3. ইনফেকশন বা ইনফ্লামেশন: যদি কালো স্রাবের সঙ্গে দুর্গন্ধ, চুলকানি, জ্বালাপোড়া বা পেটব্যথা থাকে, তাহলে এটি ইনফেকশন এর লক্ষণ হতে পারে (যেমন ব্যাকটেরিয়াল ভ্যাজিনোসিস বা STD)।

4. গর্ভপাতের সম্ভাবনা: যদি কালো বা বাদামি স্রাবের সঙ্গে পেটব্যথা, তীব্র কোমর ব্যথা, বা রক্তের গলদলা বের হয়, তাহলে তা মিসক্যারেজ বা গর্ভপাত এর লক্ষণ হতে পারে। এই ক্ষেত্রে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া জরুরি।

আপনি কী করবেন?

যদি স্রাব হালকা, দুর্গন্ধহীন, এবং পেটব্যথা ছাড়া হয়, তাহলে এটি সাধারণত বিপদজনক নয়।

তবে যদি নিচের যেকোনো উপসর্গ থাকে, তাহলে চিকিৎসকের সঙ্গে দ্রুত যোগাযোগ করুন:

  • তীব্র পেট বা কোমর ব্যথা
  • দুর্গন্ধযুক্ত স্রাব
  • রক্তের গলদলা বা ভারী রক্তপাত
  • মাথা ঘোরা, দুর্বল লাগা

মন্তব্য। গর্ভাবস্থায় ঠোঁট কালো হয় কেন ও গর্ভাবস্থায় কালো স্রাব কেন হয় 



এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url