সূরা ফাতিহা বাংলা উচ্চারণসহ অরবি অর্থ, শিক্ষা, ফজিলত ও শানে নযুল

সূরা ফাতিহা বাংলা উচ্চারণসহ অরবি অর্থ, শিক্ষা, ফজিলত ও শানে নযুল আলোচনা করা হয়েছে আজকের এই পোস্টটিতে। সূরা ফাতিহা সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে এই আর্টিকেলটির সাথেই থাকুন।
তাহলে চলুন, কথা না বাড়িয়ে এবং আপনার মূল্যবান সময় নষ্ট না করে আজকের এই গুরুত্বপূর্ণ আর্টিকেলটি প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত পড়ার মাধ্যমে জেনে নিন সূরা ফাতিহা বাংলা উচ্চারণসহ অরবি অর্থ, শিক্ষা, ফজিলত ও শানে নযুল

সূরা ফাতিহা বাংলা উচ্চারণ সহ অরবি অর্থ

সূরা ফাতিহা হলো কুরআনের প্রথম সূরা। এর বাংলা উচ্চারণ এবং অরবি অর্থ নিচে দেওয়া হলো:

সূরা ফাতিহা:

অরবি:
 بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمَنِ الرَّحِيمِ
الْحَمْدُ لِلَّهِ رَبِّ الْعَالَمِينَ
الرَّحْمَنِ الرَّحِيمِ
مَالِكِ يَوْمِ الدِّينِ
إِيَّاكَ نَعْبُدُ وَإِيَّاكَ نَسْتَعِينُ
اهْدِنَا الصِّرَاطَ الْمُسْتَقِيمَ
صِرَاطَ الَّذِينَ أَنْعَمْتَ عَلَيْهِمْ غَيْرِ الْمَغْضُوبِ عَلَيْهِمْ وَلَا الضَّلِّينَ

বাংলা উচ্চারণ: 
বিসমিল্লাহির রহমানির রাহিম
আল হামদু লিল্লাহি রব্বিল আলামিন
আর-রাহমানির রাহিম
মালিকি ইয়াওমিদ-দীন
ইয়াকা নাবুদু ওয়া ইয়াকা নাস্তা'ইন
ইহদিনাস সিরাতাল মুস্তাকীম
সিরাতাল লাযীনা আন'আমতা 'আলাইহিম গায়রি মাগদুবি 'আলাইহিম ওয়া লা দাল্লীন।

অর্থ (বাংলা):

১. বিসমিল্লাহির রহমানির রাহিম
আল্লাহর নামে, পরম করুণাময়, অতি দয়ালু।

২. আল হামদু লিল্লাহি রব্বিল আলামিন
সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর, সৃষ্টির প্রভু।

৩. আর-রাহমানির রাহিম
পরম করুণাময়, অতি দয়ালু।

৪. মালিকি ইয়াওমিদ-দীন
বিচার দিবসের মালিক।

৫. ইয়াকা নাবুদু ওয়া ইয়াকা নাস্তা'ইন
আমরা শুধু তোমারই এবাদত করি এবং তোমারই সাহায্য প্রার্থনা করি।

৬. ইহদিনাস সিরাতাল মুস্তাকীম
আমাদের সঠিক পথের নির্দেশ দাও।

৭. সিরাতাল লাযীনা আন'আমতা 'আলাইহিম গায়রি মাগদুবি 'আলাইহিম ওয়া লা দাল্লীন।
তাদের পথ যাদের প্রতি তুমি অনুগ্রহ করেছ, যারা বিপথগামী কিংবা রাগান্বিত হয়নি।

এই সূরাটি ইসলামের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ সূরা হিসেবে প্রতিদিনের পাঁচ  ওয়াক্ত  নামাযের অংশ হিসেবে পাঠ করা হয়।

সূরা ফাতিহা এর শিক্ষা

সূরা ফাতিহা ইসলামের মৌলিক শিক্ষাগুলির একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। এর মাধ্যমে অনেক মূল্যবান শিক্ষা পাওয়া যায়, যেমন:

আল্লাহর প্রতি আনুগত্য ও বিশ্বাস: সূরা ফাতিহার মাধ্যমে আল্লাহর প্রতি পূর্ণ আনুগত্য ও বিশ্বাসের শিক্ষা দেওয়া হয়। প্রথম আয়াতেই বলা হয়েছে, "বিসমিল্লাহির রহমানির রাহিম," যা দ্বারা আল্লাহর একত্ব, করুণাময়তা ও দয়ালুত্বের প্রতি বিশ্বাস জোরালো হয়।

আল্লাহর প্রশংসা: "আল হামদু লিল্লাহি রব্বিল আলামিন" (সকল প্রশংসা আল্লাহর, সৃষ্টির প্রভু) — এই আয়াতে মুসলমানদের শেখানো হয়েছে যে, সব কিছুতে আল্লাহর শ্রেষ্ঠত্ব ও মহিমা দেখতে হবে এবং তাঁর প্রতি কৃতজ্ঞ থাকতে হবে।

সহানুভূতির শিক্ষা: "আর-রাহমানির রাহিম" — আল্লাহর করুণাময়তা ও দয়ালুত্বের প্রতি মানুষের বিশ্বাস স্থাপন করা। এটি মুসলমানদের শেখায় যে, নিজেদের জীবন ও অন্যদের প্রতি সহানুভূতিশীল হওয়া উচিত।

বিচারের দিন সম্পর্কে সতর্কতা: "মালিকি ইয়াওমিদ-দীন" (বিচারের দিবসের মালিক) — এটি মুসলমানদের মনে করিয়ে দেয় যে, একদিন সকলকে তাদের কাজের জন্য বিচার করা হবে, সুতরাং জীবনকে সৎ পথে পরিচালিত করতে হবে।

আল্লাহর সাহায্য প্রার্থনা: "ইয়াকা নাবুদু ওয়া ইয়াকা নাস্তা'ইন" (আমরা শুধু তোমারই এবাদত করি এবং তোমারই সাহায্য প্রার্থনা করি) — এটি শিক্ষায় আসে যে, জীবনের সকল কাজে আল্লাহর সাহায্য প্রার্থনা করা উচিত এবং শুধুমাত্র আল্লাহর প্রতি বিশ্বাস রাখা উচিত।

সত্য পথের অনুসরণ: "ইহদিনাস সিরাতাল মুস্তাকীম" (আমাদের সঠিক পথের নির্দেশ দাও) — এটি মুসলমানদের শেখায় যে, তারা আল্লাহর নির্দেশিত পথ অনুসরণ করবে, যা ইসলামের সঠিক পথ।

নির্দেশনার অনুরোধ: "সিরাতাল লাযীনা আন'আমতা 'আলাইহিম" (তাদের পথ যাদের প্রতি তুমি অনুগ্রহ করেছ) — এটি শেখায় যে, মুসলমানদের সেই পথ অনুসরণ করতে হবে যাদের আল্লাহ তাঁর অনুগ্রহ দিয়েছেন, যেমন নবী, সাহাবী এবং সৎ মানুষ।

ভুল পথ থেকে দূরে থাকা: "গায়রি মাগদুবি 'আলাইহিম ওয়া লা দাল্লীন" (যারা রাগান্বিত হয়নি অথবা বিপথগামী হয়নি) — মুসলমানদেরকে সতর্ক করে যে, তারা যেন পাপাচারে লিপ্ত না হয় এবং ভুল পথে চলতে না থাকে।

সার্বিক শিক্ষা: সূরা ফাতিহা মুসলমানদের জীবনকে সঠিক দিশা দিতে সহায়ক। এটি তাদেরকে আল্লাহর প্রতি আনুগত্য, সঠিক পথ অনুসরণ এবং পাপ থেকে দূরে থাকার জন্য প্রেরণা দেয়। 

এটি প্রতিদিনের নামাযে পাঠ করার মাধ্যমে এক মুসলমানের আত্মবিশ্বাস, ধৈর্য ও আধ্যাত্মিক উন্নতির দিকে অগ্রসর হতে সাহায্য করে।

সূরা ফাতিহা এর ফজিল

সূরা ফাতিহার ফজিলত (গুণ) অত্যন্ত মহান এবং এটি কুরআনের প্রথম সূরা হিসেবে মুসলিম জীবনে বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ স্থান রাখে। নিচে সূরা ফাতিহার কিছু গুরুত্বপূর্ণ ফজিলত (গুণ) আলোচনা করা হলো:

১. বিশ্বের সবচেয়ে শ্রেষ্ঠ সূরা: হাদীস: নবী (সাঃ) বলেছেন, "কুরআনের মধ্যে সবচেয়ে শ্রেষ্ঠ সূরা সূরা ফাতিহা" (সহীহ মুসলিম)।

এটি কুরআনের একমাত্র সূরা, যা নামাযের মধ্যে প্রতিদিন পাঁচবার পাঠ করা হয়। সূরা ফাতিহা সবার জন্য পথপ্রদর্শক এবং এটি সারা বিশ্বের সেরা সূরা হিসেবে গণ্য।

২. রোগের উপশম ও চিকিৎসা: হাদীস, এক হাদীসে এসেছে যে, সূরা ফাতিহা চিকিৎসার জন্য খুবই কার্যকর। নবী (সাঃ) বলেছেন: "যে ব্যক্তি অসুস্থ হলে, তার জন্য সূরা ফাতিহা পাঠ করলে সে রোগ থেকে সুস্থ হতে পারে।" (সহীহ বুখারি)। 

এটি বিশ্বাস করা হয় যে, সূরা ফাতিহা শারীরিক এবং মানসিক রোগের জন্য উপশমের একটি উপায় হিসেবে কাজ করতে পারে।

৩. পাথিক পথের জন্য দিশারী: সূরা ফাতিহার মধ্যে "ইহদিনাস সিরাতাল মুস্তাকীম" (আমাদের সঠিক পথের নির্দেশ দাও) আয়াতে মুসলমানরা আল্লাহর কাছে সঠিক পথের নির্দেশনা প্রার্থনা করেন। 

এটি এক ধরনের দোয়া, যা আল্লাহর দিকে পরিচালিত হতে সাহায্য করে এবং জীবনকে সঠিক পথে পরিচালিত করে।

৪. নামাযে অপরিহার্যতা: সূরা ফাতিহা নামাযের মধ্যে অবশ্যই পাঠ করতে হয়। এটি নামাযের একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ এবং নবী (সাঃ) বলেছেন, "যে ব্যক্তি সূরা ফাতিহা না পড়ে নামায পড়ে, তার নামায অসম্পূর্ণ থাকে" (সহীহ বুখারি)।

৫. আল্লাহর প্রতি আনুগত্য প্রকাশ: সূরা ফাতিহা আল্লাহর প্রতি পূর্ণ আনুগত্য ও বিশ্বাসের প্রতীক। এর মাধ্যমে মুসলমানরা আল্লাহর প্রতি কৃতজ্ঞতা জানায় এবং তাঁর সাহায্য প্রার্থনা করে।

৬. দোয়া হিসেবে গ্রহণযোগ্যতা: সূরা ফাতিহা একটি দোয়া হিসেবে অত্যন্ত কার্যকর। এটি আল্লাহর কাছে আপনার দোয়া পৌঁছানোর একটি গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম। 

বিশেষ করে যখন কোনো বিপদ বা কঠিন সময় আসে, তখন সূরা ফাতিহা পাঠ করলে তা একধরনের আশীর্বাদ ও সাহায্য হিসেবে কাজ করতে পারে।

৭. সীমাহীন সাওয়াব: সূরা ফাতিহা পাঠ করলে অসীম সাওয়াব অর্জিত হয়। নবী (সাঃ) বলেছেন, "যে ব্যক্তি সূরা ফাতিহা পড়ে, তার জন্য আল্লাহ অনেক বড় পুরস্কার রাখেন।" এটি দৈনন্দিন জীবনে অনেক বার পাঠ করলে সাওয়াবের পরিমাণ অনেক বেড়ে যায়।

৮. তওবা এবং পাপ থেকে মুক্তি: সূরা ফাতিহার মাধ্যমে আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করা যেতে পারে। এর মধ্যে আল্লাহর দয়া এবং করুণার কথা বলা হয়েছে, যা পাপী মানুষদের জন্য ক্ষমা লাভের উপায় হতে পারে।

৯. আল্লাহর কাছ থেকে সাহায্য ও রক্ষা: সূরা ফাতিহায় বলা হয়েছে, "ইয়াকা নাবুদু ওয়া ইয়াকা নাস্তা'ইন" (আমরা শুধু তোমারই এবাদত করি এবং তোমারই সাহায্য প্রার্থনা করি)। 

এটি একজন মুসলমানকে আল্লাহর কাছে সাহায্য প্রার্থনা করতে উদ্বুদ্ধ করে এবং আল্লাহর সাহায্য ও রক্ষা লাভের পথ খুলে দেয়।

সার্বিক ফজিলত: সূরা ফাতিহা মুসলমানদের দৈনন্দিন জীবনের একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ। এর পাঠ এবং ব্যাখ্যা আমাদের আল্লাহর প্রতি বিশ্বাস, তাঁর সাহায্য প্রার্থনা, এবং সঠিক পথে চলার জন্য প্রেরণা দেয়। 

এটি শুধু নামাযে পাঠের জন্য নয়, প্রতিদিনের জীবনে নানা দোয়া এবং আশীর্বাদ হিসেবে ব্যবহৃত হয় এবং মুসলমানদের জন্য একটি সর্বশেষ আশ্রয়স্থল হিসেবে কাজ করে।

সূরা ফাতিহা এর শানে নুযুল

সূরা ফাতিহার শানে নুযুল (নাযিল হওয়ার কারণ) নিম্নোরুপ-

সূরা ফাতিহা কুরআনের ১ম সূরা এবং এটি মক্কী সূরা। এর শানে নুযুল বা এর নাযিল হওয়ার কারণ সম্পর্কে বিস্তারিত কোনো একক ঘটনা বা বিশেষ কারণ সুনির্দিষ্টভাবে হাদীস থেকে পাওয়া যায় না। 

তবে কিছু পরিপ্রেক্ষিত ও ব্যাখ্যা রয়েছে যা থেকে জানা যায় কেন এই সূরা প্রথমে নাযিল হয়েছে এবং এর প্রেক্ষাপট কী হতে পারে।

শানে নুযুল: সূরা ফাতিহার নাযিল হওয়ার সুনির্দিষ্ট একটি ঘটনা কুরআনে উল্লেখিত হয়নি। তবে কিছু বিশেষ ঐতিহাসিক পটভূমি থেকে বোঝা যায় যে, সূরা ফাতিহা মূলত মক্কার মুসলমানদের জন্য একটি বিশেষ দোয়া ও পথপ্রদর্শক হিসেবে নাযিল হয়েছিল।

মুসলমানদের জন্য দোয়া ও সাহায্য: সূরা ফাতিহা মূলত আল্লাহর কাছে সাহায্য প্রার্থনা ও সঠিক পথে পরিচালিত হওয়ার দোয়া হিসেবে নাযিল হয়।

মক্কার শুরুতে, যখন মুসলমানরা এক কঠিন এবং বিপদময় অবস্থার মধ্যে ছিল, তখন এই সূরা আল্লাহর কাছে সাহায্য ও সহানুভূতির প্রার্থনা করার একটি গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম হিসেবে নাযিল হয়েছিল। 

মুসলমানরা তখন আর্থিক, শারীরিক, সামাজিক এবং ধর্মীয় নির্যাতন সহ্য করছিল। এমন একটি সময়ে, আল্লাহর কাছে সঠিক পথের নির্দেশনা এবং সাহায্য প্রার্থনা করার জন্য সূরা ফাতিহা নাযিল হয়।

নামাযের জন্য গুরুত্বপূর্ণ সূরা: সূরা ফাতিহা নামাযের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ সূরা হিসেবে নাযিল হয়েছিল। নবী (সাঃ) এবং সাহাবিরা যখন নামাযে দাঁড়াতেন, তখন সূরা ফাতিহার মাধ্যমে তাদের একমাত্র আল্লাহর প্রতি পূর্ণ আনুগত্য ও বিশ্বাসের প্রমাণ দেওয়া হতো।

এটি মুসলমানদের জন্য আল্লাহর সাথে সম্পর্ক স্থাপনের একটি মাধ্যম এবং নামাযে আল্লাহর সঙ্গে একান্ত সংলাপের অংশ।

সর্বোচ্চ প্রশংসা এবং দোয়া: সূরা ফাতিহায় আল্লাহর প্রশংসা এবং তাঁর সাহায্য প্রার্থনার মাধ্যমে ইসলামের মৌলিক ভিত্তি স্থাপন করা হয়েছে। 

সূরা ফাতিহা মুমিনদের জানায় যে, সকল কাজ আল্লাহর নামে শুরু করতে হবে, এবং তাঁর দয়া ও করুণার উপর নির্ভরশীল হতে হবে।

সার্বিক অর্থ: সূরা ফাতিহার শানে নুযুল প্রমাণিত যে, এটি মূলত মক্কার মুসলমানদের জন্য এক গুরুত্বপূর্ণ দোয়া ও আল্লাহর কাছ থেকে সাহায্য প্রার্থনার একটি প্রক্রিয়া হিসেবে নাযিল হয়েছিল। 

এটি মুসলমানদেরকে পথভ্রষ্ট না হওয়ার জন্য সঠিক পথে পরিচালিত করার উদ্দেশ্যে নাযিল হয়েছিল, যাতে তারা বিপদ-আপদে আল্লাহর দিকে ফিরে যেতে পারে।

 সূরা ফাতিহা নামাযের জন্য অপরিহার্য একটি সূরা এবং এটি প্রতিদিন পাঁচবারের নামাযের একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ।

সূরা ফাতিমা ব্যাখ্যা 

সূরা ফাতিহা এর মধ্যে আল্লাহর প্রতি আনুগত্য, তাঁর প্রশংসা, সাহায্য প্রার্থনা এবং সঠিক পথে চলার জন্য দোয়া রয়েছে। এখানে সূরা ফাতিহার ব্যাখ্যা দেওয়া হলো:

১. بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمَنِ الرَّحِيمِ (বিসমিল্লাহির রহমানির রাহিম)
অর্থ: আল্লাহর নামে, পরম করুণাময়, অতি দয়ালু।

ব্যাখ্যা: এই আয়াতে আল্লাহর একত্ব এবং তাঁর করুণাময়তা ও দয়ালুত্বের প্রতি বিশ্বাস প্রতিস্থাপিত হয়। "বিসমিল্লাহ" শব্দটি আমাদের সকল কাজের শুরুতে আল্লাহর নাম নিতে অনুপ্রাণিত করে, যাতে আমরা মনে রাখি যে সবকিছু আল্লাহর ইচ্ছায় ঘটে এবং তাঁর দয়া ও করুণার মাধ্যমে জীবন পরিচালিত হয়।

২. الْحَمْدُ لِلَّهِ رَبِّ الْعَالَمِينَ (আল হামদু লিল্লাহি রব্বিল আলামিন)
অর্থ: সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর, সৃষ্টির প্রভু।

ব্যাখ্যা: এখানে "আল হামদু" দ্বারা আল্লাহর প্রতি সমস্ত প্রশংসা ও কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করা হয়েছে। আল্লাহ সমস্ত সৃষ্টির প্রভু এবং তিনি সৃষ্টির সমস্ত কিছু নিয়ন্ত্রণ করেন। এই আয়াতের মাধ্যমে মুসলমানরা আল্লাহর প্রতি নিজেদের কৃতজ্ঞতা জানায়।

৩. الرَّحْمَنِ الرَّحِيمِ (আর-রাহমানির রাহিম)
অর্থ: পরম করুণাময়, অতি দয়ালু।

ব্যাখ্যা: আল্লাহর দুটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ গুণ এখানে উল্লেখ করা হয়েছে: "রাহমান" (যিনি সকল সৃষ্টির প্রতি তাঁর অসীম দয়া ও করুণাময়তা প্রদর্শন করেন) এবং "রাহিম" (যিনি বিশেষভাবে মুমিনদের প্রতি দয়ালু)। এই আয়াতটি আল্লাহর অসীম দয়া এবং ক্ষমার প্রতি বিশ্বাস প্রতিষ্ঠা করে।

৪. مَالِكِ يَوْمِ الدِّينِ (মালিকি ইয়াওমিদ-দীন)
অর্থ: বিচার দিবসের মালিক।

ব্যাখ্যা: এই আয়াতে আল্লাহর বিচার দিবসের কর্তৃত্বের কথা বলা হয়েছে। এই পৃথিবী ও সমস্ত সৃষ্টির মালিক এবং বিচারক একমাত্র আল্লাহ। এটি মুসলমানদের স্মরণ করিয়ে দেয় যে, একদিন সবাইকে তাদের কাজের জন্য বিচার করা হবে।

৫. إِيَّاكَ نَعْبُدُ وَإِيَّاكَ نَسْتَعِينُ (ইয়াকা নাবুদু ওয়া ইয়াকা নাস্তা'ইন)
অর্থ: আমরা শুধু তোমারই এবাদত করি এবং তোমারই সাহায্য প্রার্থনা করি।

ব্যাখ্যা: এই আয়াতে আল্লাহর প্রতি পূর্ণ আনুগত্যের ঘোষণা করা হয়েছে। এটি মুসলমানদের শেখায় যে, শুধু আল্লাহকেই এবাদত করা উচিত এবং জীবনের সমস্ত দুঃখ-দুর্দশা, কাজ বা সমস্যার ক্ষেত্রে আল্লাহর সাহায্য প্রার্থনা করতে হবে।

৬. اهْدِنَا الصِّرَاطَ الْمُسْتَقِيمَ (ইহদিনাস সিরাতাল মুস্তাকীম)
অর্থ: আমাদের সঠিক পথের নির্দেশ দাও।

ব্যাখ্যা: এখানে মুসলমানরা আল্লাহর কাছে দোয়া করছেন যে, তাঁরা যেন সঠিক পথে চলতে পারেন। "সিরাতাল মুস্তাকীম" অর্থ সঠিক পথ, যা ইসলামিক জীবনযাত্রার পথ। এটি রুহানী পথ, যা আল্লাহর সন্তুষ্টি এবং পরকালীন মুক্তির দিকে পরিচালিত করে।

৭. صِرَاطَ الَّذِينَ أَنْعَمْتَ عَلَيْهِمْ غَيْرِ الْمَغْضُوبِ عَلَيْهِمْ وَلَا الضَّلِّينَ (সিরাতাল লাযীনা আন'আমতা 'আলাইহিম গায়রি মাগদুবি 'আলাইহিম ওয়া লা দাল্লীন)
অর্থ: তাদের পথ যাদের তুমি অনুগ্রহ করেছ, যারা বিপথগামী কিংবা রাগান্বিত হয়নি।

ব্যাখ্যা: এই আয়াতে মুসলমানরা আল্লাহর কাছে দোয়া করছেন যে, তাঁরা যেন তাদের পাথিক ও সুদৃঢ় পথ অনুসরণ করেন, যারা আল্লাহর বিশেষ অনুগ্রহে ছিলেন, যেমন নবী, সাহাবী এবং সৎ ব্যক্তিরা। 

এই আয়াতে ইসলামের পথ অনুসরণের গুরুত্ব বোঝানো হয়েছে, পাশাপাশি ভুল পথ বা বিপথগামীদের পথ থেকে দূরে থাকতে বলা হয়েছে।

সার্বিক ব্যাখ্যা: সূরা ফাতিহা মুসলমানদের জন্য একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ সূরা, কারণ এটি তাদের জীবনের ভিত্তি এবং দৃষ্টিভঙ্গি গঠন করে। 

এটি প্রার্থনার জন্য একটি দোয়া হিসেবে ব্যবহৃত হয় এবং এটি কুরআনের একমাত্র সূরা যা প্রতিদিন নামাযে পাঁচবার পাঠ করতে হয়। এর মাধ্যমে আল্লাহর প্রতি বিশ্বাস, সাহায্য প্রার্থনা, এবং সঠিক পথে চলার তাগিদ দেওয়া হয়।

মন্তব্য। সূরা ফাতিহা বাংলা উচ্চারণসহ অরবি অর্থ, শিক্ষা, ফজিলত ও শানে নযুল 


এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url